উত্তরবঙ্গের কালীপুজোর জনশ্রুতি : Goddess of Black! Rumor in Bengal

বিসর্জনের দিনই প্রতিমা তৈরি ও তার পুজো।

তিনশো বছরের বেশি সময় ধরে নিয়ম মেনে এখনো কালীপুজো হয় জলপাইগুড়ি হলদিবাড়ি রোডের বামনপাড়া কালী মন্দিরে। এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠক। প্রথম দিকে মন্দিরটি বাঁশ ও খড়ের তৈরি ছিল, পরবর্তী কালে কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ মন্দির টির বর্তমান রূপ দেন। বর্তমানে শতাব্দী প্রাচীন মন্দির টি জীর্ণ দশাই পরিণত হয়েছে। মন্দিরের গা বেয়ে এক সময় বুড়ি তিস্তা বয়ে যেত, সেই নদী এখন প্রায় ১ কিলোমিটার সরে গিয়েছে।


এই যুগে মহাপুরুষ মনীষীদের কিছু দরকারী বাণী এবং কেন প্রয়োজন 

এলাকার পুরাতন লোকেদের কথা অনুযায়ী দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠক নৌকো নিয়ে তিস্তা নদী ধরে এই বুড়িতিস্তার উপর দিয়ে পূর্ব বঙ্গে চলাচল করতেন। এই বুড়িতিস্তা হল তিস্তা নদীর একটি শাখা। সেই সময় জঙ্গলে ভরা এই পথ ধরে দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠক যাতায়াত করতেন ও এই মন্দিরে পুজো দিতেন।

Chandannagar and Krishnanagar present gorgeous Jagaddhatri Puja

 

এই মন্দিরে এখনও পুরোনো নিয়ম অনুযায়ী পূজা করা হয়। সারা বছর মন্দিরের বেদিতে কোনো মূর্তি থাকে না। এলাকার মানুষ বেদিকেই শ্রদ্ধা ও ভক্তি যোগে পুজো করেন। কালী পূজোর সময় পূজোর দিন 'কাঁচাকালী' পুজো করা হয়, এবং মাটি শুকনো হওয়ার আগেই টা বিসর্জন দিয়ে দেয়া হয়। 


পুজোয় মানতের জনশ্রুতি:

জলপাইগুড়ির গয়েরকাটা সহ পার্শবর্তী এলাকার প্রাচীন কালীপুজোর মধ্যে অন্যতম গয়েরকাটা মোরাঘাট রেঞ্জ অফিসের কালীপূজা। কাঠ নির্ভর এই বনাঞ্চল এলাকায় ১৯৪৮ সালে মোরাঘাট রেঞ্জ এর রেঞ্জ অফিসার ছিলেন এস এস রায় চৌধুরী। তাঁর একবার প্রবল জ্বর হয় যা বিভিন্ন চিকিৎসায় নিরাময় হচ্ছিলো না। রেঞ্জ অফিসারের শারীরিক পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হলে গয়েরকাটা কাঠ ব্যাবসায়ী দুর্গাপদ মুখোপাধ্যায় মায়ের কাছে এস এস রায় চৌধুরীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। এর পর কিছুদিনের মধ্যে রেঞ্জ অফিসার সুস্থ হয়ে ওঠেন। ১৯৪৮ সাল থেকে  আজ অবধি কালীপূজা হয়ে আসছে। ধীরে ধীরে এখানে মন্দির গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে দেবীর পাথরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পুজো শুরু হওয়ার পর থেকে যে কোনো অভিযানে যাওয়ার আগে বনকর্মী রা পুজো দিয়ে বের হতেন। এক সময় এখানে শতধিক পশুবলী হতো এই মন্দিরে। এই মন্দিরের প্রতি বোনবাসী, বনকর্মী ও এলাকা বাসীর আলাদা ভক্তি ও শ্রদ্ধার জায়গা আছে।


দেবী চৌধুরানী ও জলপাইগুড়ির শ্মশান কালী মন্দির ঘিরে নানা লোক কথা


জলপাইগুড়ি শহরের ১ নং ওয়ার্ডের শ্মশান ঘাটের পরিপার্শে মনোরম পরিবেশে রয়েছে শ্মশান কালী ন্দির। এই মন্দির সংলগ্ন বট গাছটি ৪০০ বছরের এবং চাপ গাছটি কম করে হলেও ১৫০ বছরের পুরোনো। এই স্থলেই ডালপালা মেলে রয়েছে ১০০ বছরের ৯০ ফুট উঁচু শিমুল গাছ।


কথিত আছে, দেবী চৌধুরানী রংপুর থেকে জলপথে যাতায়াত করার সময় এই বট গাছের নিচে বিশ্রাম করতেন। ডাকাতি করে লুট করা সম্পদ এই গাছ তলায় বসে গরিব দুঃখীদের বিলি করে দিতেন।


কাহিনী রয়েছে যে এই মন্দিরে নরবলি হতো। ইংরেজ রা নরবলি দেয়ার অপরাধে নয়ন কাপালিক নামে এক ব্যাক্তিকে ফাঁসির সাজা দেয়। কালীপুজোর সময় এখানে রীতি মেনে ১১ টি পাঠাবলি হয়।


এই মন্দিরে রয়েছে রুদ্রাক্ষ গাছ, তারাপীঠের ব্রাহ্মণ রা এখানে রুদ্রাক্ষ সংগ্রহ করতে আসেন। এখানে দেবীকে শোল মাছ ও বোয়াল মাছ দিয়ে ভোগ দেয়া হয়। শ্মশান কালী মন্দির ঘিরে আরও অনেক লোক কথা আছে যার টানে বহু মানুষ এই মন্দিরে পুজো দিতে আসে।

Post a Comment

Previous Post Next Post